ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগে এসে যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই একটি ওয়েবসাইট থাকা অপরিহার্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু প্রতিষ্ঠানই নয়, অনলাইনে নিজের একটি পার্সোনাল ওয়েবসাইট থাকার মানে হলো ডিজিটাল দুনিয়ায় আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে রয়েছেন। আজ আমরা ওয়েবসাইট তৈরির ধাপসমূহ নিয়ে আলোচনা করবো এবং আপনার জন্য কিভাবে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করবেন, ওয়েবসাইট তৈরি করার নিয়ম কি তার বিস্তারিত থাকছে এই ব্লগে।
ডিজিটাল সিল্ক -এর তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে ইন্টারনেটে মোট ১.১ বিলিয়নেরও বেশি ওয়েবসাইট রয়েছে। মজার বিষয় হলো প্রতি মাসে ৫,৪০০,০০০ ওয়েবসাইট নতুন করে ইন্টারনেটে যুক্ত হয়। সপ্তাহিক হিসেবে ১,২১৫,০০০ এবং দিনে ১৭৭,৩৭২ এবং প্রতি ঘন্টায় যা ৭,৩৯০ টি ওয়েবসাইট ইন্টারনেটে নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। বুঝতেই পারছেন ওয়েবসাইট থাকাটা কতটা গুরুত্বের।
ওয়েবসাইট কি? ওয়েবসাইট পরিচিতি:
ওয়েবসাইট হলো ইন্টারনেটে প্রদর্শিত এক বা একাধিক ওয়েবপৃষ্ঠার সংগ্রহ, যা একটি সাধারণ ডোমেইন নামের অধীনে থাকে। এটি বিভিন্ন ধরনের তথ্য, যেমন – লেখা, ছবি, ভিডিও, অডিও এবং অন্যান্য মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট ধারণ করে। ওয়েবসাইটগুলো বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন – ব্যক্তিগত ব্লগ, ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট, ই-কমার্স সাইট, সংবাদ পোর্টাল, শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট ইত্যাদি।
একটি ওয়েবসাইটের নিজস্ব ডোমেইন নাম থাকে, যা ওয়েবসাইটের ঠিকানা হিসেবে কাজ করে। এই ডোমেইন নামের মাধ্যমে যে কেউ ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমে ওয়েবসাইটটি অ্যাক্সেস করতে পারে। আপনি যে আমাদের Nakib IT -তে ভিজিট করে এই ব্লগটি পড়ছেন, এটিও একটি ওয়েবসাইট। অনলাইনে আপনি ব্রাউজার ব্যবহার করে যা কিছু দেখেন, সবই কোনো না কোনো ওয়েবসাইট।
ওয়েবসাইট তৈরি করতে কি কি লাগে?
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয়। তারমধ্যে যেই বিষয়গুলো ওয়েবসাইট তৈরির জন্য অপরিহার্য তা নিম্নরূপ:
১. ডোমেইন
২. হোস্টিং
৩. ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম
৪. থিম ইত্যাদি।
এই চারটি বিষয়ের সমন্বয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরি হয়।
ডোমেইন হলো ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইটের নাম বা ঠিকানা। যেমন: google.com, wikipedia.org, facebook.com ইত্যাদি। হোস্টিং হলো আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল সংরক্ষণের স্পেস বা স্টোরেজ। ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হলো এক ধরণের ওয়েব সফটওয়্যার, যা দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটটি কন্ট্রোল করা হবে। থিম হলো আপনার ওয়েবসাইটের বাহ্যিক গঠন।
উপরোক্ত বিষয়াদি ম্যানেজ করার পর আপনাকে একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার বা বাংলাদেশ সহ বিশ্বের যে কোনো দেশের একটি ওয়েবসাইট তৈরির প্রতিষ্ঠানকে হায়ার করতে হবে। তারা প্রথমেই আপনার চাহিদা সম্পর্কে জানতে চাইবে, তারপর তারাই আপনাকে পর্যায়ক্রমে ওয়েবসাইট তৈরির ধাপসমূহের বর্ণনা করবে এবং দিকনির্দেশনা দেবে।
ওয়েবসাইট তৈরি করার নিয়ম
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে প্রথমেই আপনাকে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে হবে। ডোমেইন ও হোস্টিং কেনার জন্য অনলাইনে অগণিত দেশি -বিদেশি কোম্পানি রয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো মানের হোস্টিং কেনার জন্য Hostinger, Bluehost, SiteGround, HostGator, DreamHost, Namecheap ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন। তারা প্রায় সব ধরণের টপ লেভেল ডোমেইন প্রোভাইড করে।
তারপর আপনাকে ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বেছে নিতে হবে। বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের ফ্রি ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পাওয়া যায়। আপনি চাইলে কাস্টোম ভাবেও ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম তৈরি করে নিতে পারেন।
সবশেষে একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য একটি থিমের প্রয়োজন হবে। আপনি যদি কাস্টোম ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের দিকে যান, তবে থিমটিকেও কাস্টোমভাবে তৈরি করতে হবে। এতে খরচের পরিমাণটাও অনেক বেশি। আর যদি কোনো ফ্রি CMS এর দিকে যান, তবে এই প্লাটফর্মগুলোতে ফ্রি এবং পেইড ভার্সনের অগণিত থিম পেয়ে যাবেন।
সিএমএস (CMS ) কি?
ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকে মূলত Content Management System, যাকে সংক্ষেপে CMS বলা হয়। অনলাইনে যত CMS রয়েছে, তারমধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় CMS হলো ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress)। ওয়ার্ডপ্রেসের বর্তমান বিশ্বব্যাপী মার্কেট শেয়ার ৬১%। ইন্টারনেটে থাকা প্রায় ৪০ শতাংশ ওয়েবসাইট ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি এবং প্রতি ছয় মাসে ১.১ মিলিয়নের বেশি নতুন ডোমেইন ওয়ার্ডপ্রেসে নতুন নিবন্ধন করে।
ওয়ার্ডপ্রেস সম্পূর্ণ ফ্রি একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার। যেটার মাধ্যমে আপনি যে কোনো ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন। ওয়ার্ডপ্রেসের ডেশবোর্ড খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি এবং আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট ব্যবহার করে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না।
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি
ওয়ার্ডপ্রেস CMS ব্যবহার করে ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য প্রথমত ডোমেইন ও হোস্টিং এর প্রয়োজন হবে। আমি পার্সোনালি রিকোমেন্ট করি Hostinger কে। তারা সাশ্রয়ী মূল্যে প্রথম বছরের জন্য খুবই ভালো ডিল প্রোভাইড করে। তাদের আরেকটি সুবিধা হলো তাদের যে কোনো হোস্টিং প্যাকেজ কিনলেই এক বছরের জন্য ডোমেইন ফ্রি। তাদের সিকিউরিটি এবং সাপোর্ট খুবই উন্নত।
তবে Hostinger ইন্টারন্যাশানাল কোম্পানি হওয়ায় তাদের সার্ভিস উপভোগ করতে আপনাকে ডলারে পেমেন্ট করতে হবে। আপনার কাছে যদি ডলারে পেমেন্ট করার মতো কোনো ভিসা বা মাস্টার কার্ড না থাকে, তবে আমাদের অনলাইন পেমেন্ট হেল্প সল্যুশন নিতে পারেন। আমরা আমাদের কার্ড দিয়ে আপনাকে ডোমেইন -হোস্টিং কিনে দেবো, আপনি আমাদের বিকাশ-নগদে টাকা দিয়ে দেবেন।
ডোমেইন ও হোস্টিং কেনার পর ওয়ার্ডপ্রেস ইনিস্টল করে আপনার ওয়েবসাইটটিকে রানিং করতে হবে। তারপর ফ্রি অথবা পেইড একটি থিম দিয়ে ওয়েবসাইটটিকে ডিজাইন করতে হবে। ওয়েবসাইট ডিজাইন করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা জরুরি। ডিজাইনটি যেনো দেখতে সুন্দর, ফাংশনাল, এসইও ফ্রেন্ডলি এবং রেসপন্সিভ ডিজাইন হয়।
আপনি যদি ওয়েবসাইট ডিজাইন করার নিয়ম না জানেন বা এই বিষয়ে তেমন জ্ঞান না রাখেন, তবে আমাদের প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইন সার্ভিস নিতে পারেন। আমরা প্রায় সব ধরনের ওয়েবসাইট তৈরি করে থাকি। ডোমেইন-হোস্টিং থেকে শুরু করে ওয়েবসাইট তৈরির যাবতীয় প্রায় সবকিছুই আমাদের মাধ্যমে করিয়ে নিতে পারবেন।
ওয়েবসাইট তৈরির খরচ
ওয়েবসাইট তৈরির খরচ বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। আপনি কোন ধরণের ওয়েবসাইট তৈরি করতে চাচ্ছেন, তার উপরই মূলত খরচটা নির্ণয় করতে হবে। সাধারণত ই কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করতে খরচ আর নিউজ পোর্টাল বা পার্সোনাল ব্লগ টাইপ ওয়েবসাইটের খরচ এক নয়।
একটি .COM, .NET, .ORG ইত্যাদি টাইপ ডোমেইন এবং মোটামুটি ভালোর মধ্যে হোস্টিং নিলে খরচ হবে ৪,৫০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা। এটা শুধু ডোমেইন ও হোস্টিং কেনার খরচ। ওয়ার্ডপ্রেস তো সম্পূর্ণ ফ্রি। তাই ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের পেছনে কোনো খরচ নেই।
ওয়েবসাইট তৈরি বা ওয়েবসাইট ডিজাইনের খরচটা ওয়েবসাইটের ধরণের উপর নির্ভর করে। ওয়েবসাইট যদি নিউজ পোর্টাল, পার্সোনাল ব্লগ, পোর্টফোলিও ইত্যাদি টাইপের হয়, তবে ওয়েব ডিজাইনের জন্য ৫,০০০/- থেকে ১০,০০০ টাকা খরচ করতে হবে। আর ওয়েবসাইট যদি ই-কমার্স বা বড় ধরণের বিজনেসের জন্য হয়, তবে ১০,০০০/- থেকে ৫০,০০০/- এর মতো খরচ হবে। কম-বেশিও হতে পারে।
ওয়েবসাইট তৈরির খরচ মূলত গ্রাহকের চাহিদা, প্লাটফর্ম নির্ণয়, ওয়েবসাইটের ধরণের উপর নির্ভর করে। আপনি যে কোনো ওয়েবসাইট তৈরির প্রতিষ্ঠানকে হায়ার করেন না কেন, তাদের কাছ থেকে আপনি খরচের বিষয়টা জেনে নিতে পারবেন। তারা নিশ্চয় আপনাকে দিকনির্দেশনাও দেবে।
ওয়েবসাইট তৈরি করতে কেন একজন এক্সপার্টের হেল্প নেবেন?
ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি ও ডিজাইন করা আহামরি খুব বেশি কঠিন না হলেও আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরির করার ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ওয়ার্ডপ্রেস ইনিস্টল করে ওয়েবসাইটে একটি থিম ইনিস্টল করার মানেই ওয়েবসাইট ডিজাইন শেষ নয়, এটা কেবল শুরু।
২০২৫ সালে এসে আপনি যদি এসইওর নিয়ম নীতি অনুসরণ করে সঠিক ভাবে ওয়েবসাইটটি ডিজাইন করতে না পারেন, তবে আপনার সেই ওয়েবসাইটটি গুগলে রেংক করার সম্ভাবনা খুবই কম। আবার ওয়েবসাইট সিকিউরিটির বিভিন্ন ইস্যু আছে, যা নতুন হিসেবে আপনি হয়ত তেমন বুঝবেন না। এজন্যই ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনারের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।
একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে একটি সঠিক থিম নির্বাচন, এসইও অপটিমাইজ ডিজাইন, প্রয়োজনীয় প্লাগইন ও টুলস সেটআপ সহ প্রায় ওয়েবসাইটের প্রায় সকল প্রয়োজনীয়তা পূরণ করবে। আবার প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইন এক্সপার্ট দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই পুরো প্রসেসটি কমপ্লিট করে দেবে। এতে সময় বাঁচবে এবং ওয়েবসাইট টেকনিক্যালভাবে অনেক ভালো থাকবে।
Nakib IT এর ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস
নকীব আইটি বাংলাদেশের সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং সার্ভিস প্রোভাইডারদের সমন্বয়ে সঠিক একটি ওয়েবসাইট তৈরির প্রতিষ্ঠান। আমাদের এক্সপার্টরা শুধু ওয়েব ডিজাইন নিয়েই কাজ করে না, বরং এসইও ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়েও বিশেষ দক্ষতা রাখে। এজন্য আমরা বুঝতে পারি যে, একটি ওয়েবসাইট তৈরিতে এসইওর গুরুত্ব কতটুকু।
নতুন উদ্যোক্তাদেরকে স্পেশালি হেল্প করার জন্যে আমাদের ওয়েব ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস কোয়ালিটি ঠিক রেখে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যেই প্রোভাইট করার চেষ্টা করি। আমাদের টিম গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য নিবেদিত ভাবে ২৪/৭ ঘন্টা সাপোর্ট দেয়। যা আপনাকে অনলাইনে সফল হতেও সাহায্য করবে।
ওয়েবসাইট তৈরি করার নিয়ম ও শেষ কথা:
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার পদ্ধতি মূলত, প্রথমেই ডোমেইন ও হোস্টিং কেনা, তারপর কোনো একটি ওয়েবসাইট ম্যানেজমন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে ওয়েবসাইট রান করা, তারপর একটি থিম সেটআপ করে ওয়েবসাইটটিকে সাজানো। এভাবেই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয়।
ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সঠিক CMS ও উপযুক্ত থিম নির্বাচন করতে হবে। তারপর এসইও ফ্রেন্ডলি ও রেসপন্সিভ ডিজাইন নিশ্চিত করতে হবে। আপনি যদি এভাবে ওয়েবসাইট তৈরির সকল গাইড ফলো করে আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি করেন, তবে ওয়েবসাইটের কাঙ্খিত উদ্দেশ্য খুব সহজেই পূরণ করতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।