ডোমেইন হোস্টিং কি

ডোমেইন হোস্টিং কি? কিভাবে কাজ করে?

আজকের ডিজিটাল বিশ্বে, আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকা প্রায় অপরিহার্য বিষয়। আপনি একজন ব্যবসায়ী, ব্লগার বা সৃজনশীল উদ্যোক্তা হোন না কেন, একটি ওয়েবসাইট আপনাকে বিশ্বব্যাপী দর্শকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে, আপনার ধারণা শেয়ার করতে এবং আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে দুটি অপরিহার্য জিনিসের প্রয়োজন হবে, তা হলো ডোমেইন এবং হোস্টিং।

আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান, তবে আপনাকে জানতে হবে ডোমেইন হোস্টিং কি এবং এগুলো কিভাবে কাজ করে। এই ব্লগে আমরা ডোমেইন ও হোস্টিং সংক্রান্ত প্রায় সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

ডোমেইন হোস্টিং কি?

ডোমেইন ও হোস্টিং মূলত একটি ওয়েবসাইটের মূল মেটেরিয়াল। আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান, তবে প্রাথমিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আপনাকে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে হবে। এগুলো ছাড়া ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় না। ডোমেইন ও হোস্টিং কি তার আদ্যোপান্ত নিচে তুলে ধরা হলো:

ডোমেইন কি?

ডোমেইন হলো ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা। সহজ ভাষায়, এটি হলো সেই নাম যা ব্যবহারকারীরা আপনার ওয়েবসাইটে পৌঁছানোর জন্য তাদের ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে লেখে। যেমন: google.com, wikipedia.org, facebook.com, nakibit.com ইত্যাদি।

ডোমেইন নাম সাধারণত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত:

  1. নাম: এটি আপনার ব্যবসা বা ওয়েবসাইটের নাম। যেমন – Nakib IT, এটি আমাদের ওয়েবসাইটের নাম।
  2. এক্সটেনশন: এটি ডোমেইনের ধরন নির্দেশ করে। জনপ্রিয় এক্সটেনশনগুলির মধ্যে রয়েছে .com, .net, .org এবং .edu ইত্যাদি।

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম ও এক্সটেনশন মিলে একটি পূর্ণাঙ্গ ডোমেইন তৈরি হয়। যেটাকে ডোমেইন নাম বলা হয়। যেমন – nakibit.com, এখানে nakibit হলো প্রতিষ্ঠানের নাম, আর .com হলো এক্সটেনশন।

ডোমেইন কিনতে গিয়ে আপনি হয়ত ডোমেইন সম্পর্কিত আরো তিনটি বিষয়ের কথা শুনে থাকবেন। তা হলো টপ লেভেল ডোমেইন, সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন ও সাব ডোমেইন ইত্যাদি। নিচে ডোমেইন নামের প্রকারভেদগুলো আলোচনা করা হলো:

টপ লেভেল ডোমেইন কি?

টপ-লেভেল ডোমেইন যাকে TLD ডোমেইন বলা হয়। এটি ডোমেইন নামের শেষ অংশ। যেমন: .com, .org, .net, .edu ইত্যাদি।

টপ-লেভেল ডোমেইন আবার দুই প্রকার:

১, জেনেরিক টপ-লেভেল ডোমেইন (gTLD): এগুলো সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। যেমন: .com (বাণিজ্যিক), .org (সংস্থা), .net (নেটওয়ার্ক), .edu (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)।

২, কান্ট্রি কোড টপ-লেভেল ডোমেইন (ccTLD): এগুলো নির্দিষ্ট দেশের জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন: .bd (বাংলাদেশ), .uk (যুক্তরাজ্য), .in (ভারত)।

সেকেন্ড লেভেল ডোমেইন কি?

সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইনকে SLD ডোমেইন বলা হয়। এটি টপ-লেভেল ডোমেইনের আগের অংশ। যেমন: google, wikipedia, facebook, nakibit ইত্যাদি। এটি মূলত ওয়েবসাইটের মূল নামকে বুঝানো হয়।

সাবডোমেইন কি?

সাবডোমেইন মূলত সেকেন্ড-লেভেল ডোমেইনের আগের অংশকে বুঝানো হয়। এটি মূল ডোমেইন নামের আগের অংশে কোনো একটি শব্দ যুগ করে ওয়েবসাইটের আরেকটি সতন্ত্র বিভাগ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। যেমন: blog.google.com, news.wikipedia.org ইত্যাদি।

ডোমেইন এর কাজ কি?

ডোমেইন নাম কিভাবে কাজ করে তা বুঝতে হলে, প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আইপি অ্যাড্রেস (IP address) কি। প্রতিটি ওয়েবসাইটের একটি নিজস্ব আইপি অ্যাড্রেস থাকে, যা সংখ্যা দিয়ে তৈরি এবং দেখতে অনেকটা 192.168.1.1 এর মতো। এই আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করেই কম্পিউটারগুলো ইন্টারনেটে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে।

এখন, এই সংখ্যাগুলো মনে রাখা তো খুব কঠিন, তাই না? এখানেই ডোমেইন নাম বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ডোমেইন নাম হলো আইপি অ্যাড্রেসের একটি সহজ ও মনে রাখার মতো রূপ। যখন আপনি আপনার ব্রাউজারে একটি ডোমেইন নাম (যেমন, google.com) টাইপ করেন, তখন আপনার অজান্তেই কিছু প্রক্রিয়া ঘটে:

DNS (Domain Name System):

  • ডোমেইন নাম সিস্টেম (DNS) হলো ইন্টারনেটের ফোনবুকের মতো। এটি ডোমেইন নামগুলোকে সংশ্লিষ্ট আইপি অ্যাড্রেসে অনুবাদ করে।
  • যখন আপনি একটি ডোমেইন নাম টাইপ করেন, তখন আপনার কম্পিউটার DNS সার্ভারের কাছে সেই ডোমেইন নামের আইপি অ্যাড্রেস জানতে চায়।
  • DNS সার্ভার সেই ডোমেইন নামের সাথে সংশ্লিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস খুঁজে বের করে এবং আপনার কম্পিউটারে পাঠায়।

সার্ভারের সাথে যোগাযোগ:

  • আপনার কম্পিউটার আইপি অ্যাড্রেস পাওয়ার পর, সেটি সেই আইপি অ্যাড্রেসের সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করে।
  • তারপর সার্ভার আপনার অনুরোধ করা ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো আপনার কম্পিউটারে পাঠায়।

ওয়েবসাইট লোড:

  • আপনার কম্পিউটার সেই ফাইলগুলো ব্যবহার করে আপনার ব্রাউজারে ওয়েবসাইটটি প্রদর্শন করে।

সংক্ষেপে, ডোমেইন নামগুলো আইপি অ্যাড্রেসের একটি সহজ রূপ, যা DNS ব্যবহার করে আইপি অ্যাড্রেসে অনুবাদ করা হয় এবং ওয়েবসাইট লোড করতে সাহায্য করে। আর এই সমস্ত বিষয় গুলো আমাদের চোখের আড়ালে ঘটে।

হোস্টিং কি?

একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ডোমেইন নাম এবং হোস্টিং উভয়ই প্রয়োজন। ডোমেইন নাম হলো আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা, যা ব্যবহারকারীরা তাদের ব্রাউজারে টাইপ করে আপনার সাইটে পৌঁছাতে পারে। অন্যদিকে, হোস্টিং হলো সেই পরিষেবা যা আপনার ওয়েবসাইটের ফাইল এবং ডেটা একটি সার্ভারে সংরক্ষণ করে।

সহজ ভাষায়, হোস্টিং হলো আপনার ওয়েবসাইটের জন্য একটি অনলাইন স্টোরেজ স্পেস। এই স্টোরেজ স্পেসে আপনার ওয়েবসাইটের ফাইল, ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য ডেটা সংরক্ষণ করা হয়। যখন কেউ আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করে, তখন তাদের ব্রাউজার আপনার হোস্টিং সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং আপনার ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো লোড করে।

হোস্টিং কিভাবে কাজ করে?

হোস্টিং মূলত একটি সার্ভার কম্পিউটারে কাজ করে। এই সার্ভার কম্পিউটারটি ২৪ ঘণ্টা ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে। যখন কেউ আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিট করে, তখন তাদের ব্রাউজার ডোমেইন নেম সিস্টেম (DNS) ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটের আইপি ঠিকানা খুঁজে বের করে। তারপর, ব্রাউজার আপনার হোস্টিং সার্ভারের সাথে সংযোগ স্থাপন করে এবং আপনার ওয়েবসাইটের ফাইলগুলো লোড করে।

হোস্টিংয়ের প্রকারভেদ:

অনলাইনে আপনি বিভিন্ন ধরনের হোস্টিং পরিষেবা পাবেন। যার মধ্যে রয়েছে –

প্রত্যেকটি হোস্টিং এর কাজ একই, তবে ভিন্ন নাম হওয়ার কারণ হলো এর শক্তি ও কার্যক্ষমতার মধ্যে থাকা পার্থক্য।

হোস্টিং কেন প্রয়োজন?

হোস্টিং একটি ওয়েবসাইটের জন্য অপরিহার্য। এটি আপনার ওয়েবসাইটকে অনলাইনে দৃশ্যমান করে এবং ব্যবহারকারীদেরকে আপনার সাইট অ্যাক্সেস করতে দেয়। একটি ভালো হোস্টিং পরিষেবা আপনার ওয়েবসাইটের কর্মক্ষমতা উন্নত করে এবং ব্যবহারকারীদের একটি ভালো অভিজ্ঞতা দেয়।

হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই ওয়েবসাইটের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক হোস্টিং পরিকল্পনা নির্বাচন করতে হবে। তারপর একটি নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত কোম্পানিকে বেছে নিতে পাবে। তারপর হোস্টিং এর ফিচার ও খরচ নিয়ে আপনাকে যাচাই বাছাই করতে হবে। আর এগুলো করেই হোস্টিং কেনার চেষ্টা করবেন।

ডোমেইন হোস্টিং কি ও শেষ কথা:

ডোমেইন এবং হোস্টিং একটি ওয়েবসাইট তৈরি এবং প্রকাশ করার জন্য অত্যাবশ্যক দুটি উপাদান। ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইটের ঠিকানা, যা ব্যবহারকারীদেরকে আপনার ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, হোস্টিং হলো সেই স্থান, যেখানে আপনার ওয়েবসাইটের ফাইল এবং ডেটা সংরক্ষণ করা হয়।

আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে চান, তবে ডোমেইন হোস্টিং আপনাকে কিনতে হবে। আর এগুলো কেনার জন্য অবশ্যই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কোম্পানিকে বেছে নেওয়া উচিত।

রিলেটেড পোস্ট :-

বিজ্ঞাপন

আরো ব্লগ পড়ুন:

বর্তমান সময়ে প্রতিটি ছোট -বড় অনলাইন বিজনেসের জন্যই এক বা একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা

এসইও (SEO) এর সাথে ব্যাকলিংক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। অফপেজ এসইওর মূল বিষয়বস্তুই হলো ব্যাকলিংক। ব্যাকলিংক কাকে

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, অনলাইন উপস্থিতি যেকোনো ব্যবসা বা ব্যক্তিগত ব্র্যান্ডের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েবসাইট ভিত্তিক ব্যবসায়ের

× How can I help you?