প্রযুক্তির এই যুগে যে কোনো সচেতন উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানেরই এক বা একাধিক ওয়েবসাইট রয়েছে। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার প্রাথমিক ধাপ হলো ডোমেইন ও হোস্টিং ক্রয় করা। উদ্যোক্তাদের মধ্যে যারা নতুন করে ওয়েবসাইট খুলতে চাচ্ছেন, তাদের অনেকেই ডোমেইন ও হোস্টিং এর মধ্যে পার্থক্য কি তা বুঝেন না।
আপনিও যদি নতুন উদ্যোক্তাদের একজন হয়ে থাকেন, তবে আপনাকে অবশ্যই ডোমেইন হোস্টিং এর মধ্যকার পার্থক্য সম্পর্কে জানা উচিত। ডোমেইন হোস্টিং এর পার্থক্য বুঝার জন্য আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে ডোমেইন হোস্টিং কি এবং কিভাবে কাজ করে।
ডোমেইন কী?
সহজ ভাষায়, ডোমেইন হলো আপনার ওয়েবসাইটের নাম বা ঠিকানা। যেমন, google.com, facebook.com, nakibit.com ইত্যাদি। ডোমেইন একটি ইউনিক নাম, যা ইন্টারনেটে আপনার ওয়েবসাইটকে খুঁজে পেতে সাহায্য করে। যে কোনো ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ডোমেইন নাম অপরিহার্য বিষয়।
ডোমেইন নাম সাধারণত দুটি বিষয় নিয়ে গঠিত। প্রথমটি হলো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং দ্বিতীয়টি হলো এক্সটেনশন। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম যেমন – Nakib / Nakib IT ইত্যাদি। আর এক্সটেনশন বলতে .com / .net / .org / .info / .edu ইত্যাদি। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম + এক্সটেনশন মিলেই একটি পূর্ণাঙ্গ ডোমেইন নাম তৈরি হয়। যেমন: Nakib.info / nakibit.com ইত্যাদি।
হোস্টিং কি?
হোস্টিং হলো ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত একটি কম্পিউটারের স্টোরেজ, যেখানে আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল এবং ডেটা সংরক্ষিত থাকে। সহজ ভাষায়, এটি অনেকটা আপনার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভের মতো, তবে এটি ইন্টারনেটে ২৪ ঘণ্টা যুক্ত থাকে, যাতে যে কেউ আপনার ওয়েবসাইট দেখতে পারে।
হোস্টিংকে অন্য ভাষায় ওয়েব হোস্টিংও বলা হয়। হোস্টিংয়ের কাজ হলো ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল স্টোর করে রাখা। আর ডোমেইনের কাজ হলো সেই ফাইল গুলোকে এক্সেস করার জন্য একটি বিশেষ মাধ্যম। সহজ ভাষায়, হোস্টিং হলো ওয়েবসাইটের বাড়ি। আর ডোমেইন হলো সেই বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা।
ডোমেইন ও হোস্টিং এর মধ্যে পার্থক্য
ডোমেইন হোস্টিংয়ের পার্থক্য হয়ত অনেকেই উপরোক্ত আলোচনা থেকেই বুঝে গেছেন। কিন্তু একটি ওয়েবসাইটের ডোমেইন ও হোস্টিং এর কার্যক্রম পরিচালনায় বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার হয়, যা সাধারণ ইউজারেরা কখনই বুঝতে পারে না।
নিচে ডোমেইন এবং হোস্টিং এর মধ্যে পার্থক্য টেবিল আকারে দেওয়া হলো:
ডোমেইন | হোস্টিং |
---|---|
ডোমেইন হলো ওয়েবসাইটের নাম বা ইউআরএল, যেমন: www.example.com | হোস্টিং হলো ওয়েবসাইটের ডেটা, ফাইল এবং কন্টেন্ট সংরক্ষণ করার জন্য সার্ভিস। |
এটি ওয়েবসাইটের ঠিকানা হিসেবে কাজ করে। | এটি ওয়েবসাইটের তথ্য এবং ফাইলগুলো ইন্টারনেটে রাখে, যাতে সেগুলো অ্যাক্সেস করা যায়। |
example.com, google.com, facebook.com | Bluehost, HostGator, SiteGround, GoDaddy |
এটি মূলত একটি নাম বা ইউআরএল, যা লোকাল বা ইন্টারন্যাশনাল হতে পারে। | এটি একটি সার্ভার সেবা, যেটি শেয়ারড, ভিপিএস, ডেডিকেটেড বা ক্লাউড হতে পারে। |
মানুষ বা ব্যবহারকারী ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করতে এটি ব্যবহার করে। | ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট এবং ডেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে অ্যাক্সেস করার জন্য এটি প্রয়োজন। |
সাধারণত বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন ফি লাগে। | হোস্টিং এর জন্য মাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে ফি প্রদান করতে হয়। |
ডোমেইন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিবন্ধিত থাকে (কমপক্ষে ১ বছর)। | হোস্টিং সাবস্ক্রিপশন প্রতি মাসে বা বছরে নবায়ন করতে হয়। |
ডোমেইন রেজিস্ট্রার মাধ্যমে নিবন্ধন করা হয়। | হোস্টিং প্রদানকারীর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের ফাইল স্টোর করা হয়। |
ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন প্রদানকারী যেমন: GoDaddy, Namecheap | হোস্টিং প্রদানকারী যেমন: Bluehost, HostGator, DigitalOcean |
এভাবে ডোমেইন এবং হোস্টিং একে অপরের পরিপূরক হলেও, তাদের কাজ ও কার্যকারিতা আলাদা। ডোমেইন হলো ওয়েবসাইটের নাম, আর হোস্টিং হলো ওয়েবসাইটের তথ্য রাখার জায়গা। বর্তমানে প্রায় সকল হোস্টিং কোম্পানিই ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা দিয়ে থাকে।
শেষ কথা:
যে কোনো ধরনের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ডোমেইন ও হোস্টিং অপরিহার্য। আপনি যদি ওয়েবসাইট তৈরির কথা চিন্তা করে থাকেন, তবে অবশ্যই আপনাকে ডোমেইন ও হোস্টিং কিনতে হবে। ডোমেইন ও হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে আপনার উচিত একটি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ওয়েব হোস্টিং কোম্পানিতে বেছে নেওয়া।